নক্ষত্রে গোধূলি-৫৬/২৫০

৭৫।
চারদিকে দেখতে দেখতে হেঁটে সমারফিল্ডে ঢুকলেন। এক পাশে লাইন ধরে সাজানো ট্রলি রয়েছে যে বেশি বাজার করবে সে এখান থেকে একটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এখানেও সিকিউরিটি গেট এবং অটোমেটিক দরজার সামনে আসতেই দরজা খুলে গেলো। ভেতরে ঢুকেই গরমের ছোঁয়া। গেটের ভিতরেই প্লাস্টিকের ঝুরি সাজানো রয়েছে যে কম কেনাকাটা করবে সে এখান থেকে একটা নিয়ে নিচ্ছে। ঢোকার পর ডাইনে কাস্টমার সার্ভিসের কাউন্টার বায়ে সিকিউরিটির সিসি ক্যামেরা মনিটর করার ডেস্ক। তার পাশে ফুলের সেকশন। নানান রকমের ফুল সাজানো রয়েছে বিক্রির জন্যে। সামনে এক মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত অনেকগুলি চেক ইন কাউন্টারের উপরে নম্বর লেখা। সব গুলিতেই স্ক্যানার এবং টিল। সিসি ক্যামেরার মনিটর করা দেখে অবাক হলো, এখানেও তাহলে চুরি হয়!
ভেতরে ঢোকার পথ আর বের হবার পথ সবুজ আর লাল রঙ দিয়ে লেখা। হ্যাঁ সুপার স্টোরই বটে, বিশাল, কত হাজার রকমের মালামাল রয়েছে কে জানে, ফুল থেকে টেলিভিশন সবই আছে। কোথায় কী আছে, কি কি আছে এতো খুঁজে বের করা কঠিন ব্যাপার। রাশেদ সাহেব ভেতরে ঢুকলেন। হেঁটে এগিয়ে যেয়ে চেক ইন কাউন্টারে যেখান থেকে নম্বর শুরু হয়েছে সেখান থেকে দেখা শুরু করলেন। প্রতিটা রো এর উপরে রো নম্বর আর ঐ রোতে কি আছে তার নাম লেখা। তাই দেখে দেখে এক দিক থেকে দেখতে শুরু করলেন। হাতে ঘড়িটা দেখে নিলেন। না ঠিক আছে তিনটা বাজে। ইফতারের দেরি আছে, আজ এখান থেকেই কিছু কিনে ইফতার করে নিব এজন্যে আর ফিরে যাব না। কত জিনিষ তার হিসাব করা কঠিন। স্কিম, সেমি স্কিম, নন স্কিম দুধ, বিভিন্ন ডেইরি ফারমের উৎপাদিত সাদা প্লাস্টিকের গ্যালনের কন্টেইনার তিন লি:, দুই লি:, এক লি:, আধা লিটারের বোতল লাল সবুজ নীল ঢাকনা আর লেবেল দিয়ে ফ্যাটের পরিমাণ চিহ্নিত করা। লাল ঢাকনায় থাকে সবচেয়ে কম ফ্যাট, সবুজ ঢাকনায় থাকে অর্ধেক ফ্যাট, আর নীল ঢাকনায় থাকে ফুল ফ্যাট। আরও আছে ল্যাক্টোজ ফ্রি, লঙ লাইফ অনেক রকম এতো দেখার সময় নেই।
এরপরে দৈ, সেও নানান রকম আধা লি: প্লাস্টিকের গ্লাসে বিভিন্ন স্বাদের বিভিন্ন ফল মেশানো স্বাদের। তারপরে পনীর। এই পনীর যে কত রকমের তা যেমন দেখাও কঠিন লেখাও কঠিন। রান্নার জন্যে সূর্যমুখী তেল, তিলের তেল, চিনাবাদামের তেল, ভেজিটেবল তেল, আলমন্ড বাদাম তেল, আঙ্গুর বীজের তেল, তুলা বীজের তেল, অলিভ তেল। হাজার রকমের সস। এমনি খাওয়ার সস, রান্নার সস, সালাদ ড্রেসিঙের সস, প্যাকেট সুপ, নুডলস, চিনি, লবণ, চিপস, ক্র্যাকারস অর্থাৎ আমরা যা ব্যাবহার করি তার সব কিছুরই অনেক অনেক প্রকার যা আমাদের দেশে আমরা জানিই না। তবে সবজির সেকশনে গিয়ে একটু হতাশ হলেন। ফুলকপি, পাতা কফি, গাজর, পারস্নিপ নামের সাদা গাজর, শালগম, স্পিনাস নামের আমাদের পালং শাক, ছোট পাতা কফির মত দেখতে স্প্রাউট যা এক বারে একটা মুখে দেয়া যায়, ব্রকলি, সিম, বরবটি, লাল হলুদ সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম, লিক, এস্পারাগাস এই হলো সবজি, মটর সুটি আছে তবে ফ্রোজেন তবে আলু আর পিঁয়াজের অনেক প্রকার তার মধ্যে সালাদের জন্যে লাল পিঁয়াজ তার খুব ভালো লাগলো।
হরেক রকমের টমাটো সাথে লম্বা চিচিঙ্গার মত শসা। লেটুস যে কত রকমের হতে পারে তা তার ধারনাতেই ছিলোনা বিভিন্ন রকমের লেটুস, রেস্টুরেন্টে আলু খেয়েছে বেশ সুস্বাদু। অনেক রকম তৈরি খাবার ফ্রিজে রয়েছে কোনটা এনে কিছুক্ষণ রান্না করতে হবে, কোনটা শুধু মাইক্রোওয়েভে গরম করে নিলেই হবে। সবজির ওখানে দেখছে অনেক তাজা সবজি আছে যেগুলি চুলায় দেয়ার জন্যে রেডি করা প্যাকেট।

স্টোরের ভিতরে কিছু খাওয়া নিষেধ এদিকে ইফতারের সময় হয়ে এসেছে। পানীয়ের কাছে গেলেন এক ক্যান ডায়েট কোক নিয়ে আবার হালকা খাবারের কাছে এসে দুইটা ভেজিটেবল পেটিসের মত নিলেন। চেক ইন পয়েন্টে দাম দিয়ে বের হবার পথে মনে করলেন দেখি কোন ফুলের কেমন গন্ধ! কাছে এসে শুঁকে দেখে হতাশ হলেন কি ব্যাপার দেখতে কি সুন্দর অথচ কোন ফুলেই গন্ধ নেই? অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। আচ্ছা এব্যাপারে পরে ভাবব। বাইরে এসে কার পার্কিঙের কাছে বসার বেঞ্চ দেখে এসেছে ঢোকার আগে, ওখানে বসলেন। ঘড়ি দেখে আস্তে আস্তে ইফতার করলেন। পেটিসটা গরম করা দরকার ছিলো কিন্তু কোথায় করবে তাই গরম না করেই খেয়ে ফেললেন।

ইফতারের পরে কিছুক্ষণ বেঞ্চেই বসে রইলেন। একটা সিগারেট বানিয়ে অনেকক্ষণ ধরে টানলেন। এতক্ষণ মাথায় কোন চিন্তা আসার সুযোগ আসেনি। এখন মনি আর মেয়েরা কখন যে এসে মাথায় ভিড় করেছে টের পায়নি। শীত লাগছে তবুও উঠছে না। সিগারেটটা ফেলে দিয়ে আবার গ্লোভস পরে নিলেন। ঠাণ্ডার মধ্যে বসা যাচ্ছে না কিন্তু রুমে গিয়ে কি করবেন সময় তো কাটতে চাইবে না। ওহ! ভালো কথা ফিরোজকে একটা ফোন করবে। উঠে দাঁড়ালেন। এদিক ওদিক দেখে ফোন বক্স পেয়ে কাছে গিয়ে ফিরোজকে পেয়ে কিছু কথা বার্তা হলো। তেমন কিছুনা, কেমন আছ কেমন লাগছে এই সব। এতেই চল্লিশ পেনি লেগে গেলো। ফোনটা ছেড়ে রাস্তার দিকে হেঁটে এলেন। বাসস্ট্যান্ডের পাশে বেঞ্চ আছে তারই একটাতে বসলেন। এখন কি করবে? অন্ধকার হয়ে গেছে, যদিও দিনের মত আলো জ্বলছে কিন্তু শত হলেও রাত। এদিকে ভালোই ঠাণ্ডা লাগছে আর কিছু দেখা হলো না। থাক আছিই তো পরে দেখা যাবে কত দিন থাকতে হবে কে জানে তখন কি করবো আস্তে আস্তেই দেখা যাবে। না এখন ফেরা যাক। তবুও বসে রইলেন, ঠাণ্ডা লাগছে তবুও উঠতে মন চাইছে না। আবার একটা সিগারেট বানিয়ে জ্বালালেন।

রাস্তায় মানুষ জন নেই। সে যেখানে বসেছে তার চতুর্দিকে রাস্তার পাশে আরও কয়েকটা বেঞ্চ আছে কিন্তু সবই খালি তার মত শীতের মধ্যে রাতের বেলা কেও বসে নেই। এখান থেকে রাস্তাটা যে দিকে বেরিয়ে গেছে তার একটা দিয়ে সে অক্সফোর্ড থেকে এসেছে, একটা গেলো লাইবেরির দিকে আর একটা রেস্টুরেন্টের দিকে জর্জ স্ট্রিট বাকি দুইটার কোনটা কোথায় গেছে কে জানে! সব রাস্তার মাথায় ফোনবুথ আছে, আর আছে আবর্জনা ফেলার বিন, উপরে ঢাকনা দেয়া এতে কোন ভুল নেই। জ্বলন্ত সিগারেট নিভিয়ে ফেলার জন্যে ঢাকনার উপরে আলাদা ব্যবস্থা। কয়েকটা দোকানের সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে। কোনটা কিসের দোকান সব বোঝা যাচ্ছে না। সবই প্রায় বন্ধ তবে কাঁচের দেয়াল থাকাতে সবই দেখা যেত যদি ভেতরে আলো থাকতো। একটা ব্যাংক, বারকলেজ ব্যাংক। একটা মনে হলো বাচ্চাদের খেলনার দোকান কাঁচের দেয়ালের বাইরে থেকে রাস্তার আলোতে ভিতরে যা দেখা যাচ্ছে তাতে সেইরকম মনে হলো, একটা মোবাইল ফোনের দোকান, একটা চুল কাটার সেলুন পরিষ্কার লেখা “কোলিনস বারবার শপ” একটা ফিস এন্ড চিপসের দোকানের সামনে দুই একজন দাঁড়িয়ে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. দাউদুল ইসলাম : ২৩-১২-২০১৯ | ১৬:২৫ |

    প্রিয় দাদা ভাই , আপনার  লিখা  দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়ি আমি ।
    আজ আবারও পড়লাম …..মুগ্ধতা রাখছি ।
     

     

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ২৯-১২-২০১৯ | ১৩:০৬ |

    শুভেচ্ছা রইলো বন্ধু। সালাম।

    GD Star Rating
    loading...